কোনো ভাবেই এই সমীকরণকে সরাসরি সমাধান করা যাবে না। ১৬৭০ সাল নাগাদ নিউটন ইনফাইনাইট সিরিজের এরর প্রোপাগেশন (error propagation) নিয়ে বিভিন্ন ক্যালকুলেশন করছিলেন। De analysi per aequationes numero terminorum infinitas (১৬৬৯) এবং De metodis fluxionum et serierum infinitarum (১৬৭১) দুটি গবেষণা পত্রে এই বিষয়ে কিছু সমাধান দিয়ে যান। ১৬৯০ সালে জন রাপসন নিউটনের মেথডকে আরো ইনফাইনাইট সিরিজ ছাড়াও যেকোনো সমীকরণের সাধারণ সমাধানের জন্য ব্যবহার করলেন। তখন কম্পিউটার ছিলনা, নিউটন-রাপসন পদ্ধতিতে (Newton-Raphson method) বারবার করে সমীকরণ কে সমাধান করে (iterative process), তার এরর কমিয়ে এনে সবথেকে নিকটবর্তী একটা সমাধান বের করা যায়। এই সমাধান কখনই খাতা কলমে সরাসরি সমাধানের মতো হয় না। তবে অনেক বার ইটারেশন করলে, প্রকৃত সমাধান আর আপেক্ষিক সমাধানের মধ্যে এরর ভীষণ কমিয়ে আনা যেতে পারে। এই ধরনের আপেক্ষিক সমাধান করার সাধারণ নাম নিউমেরিকাল/গাণিতিক মেথড/মডেল (Numerical methods)। ভাবা যাক, এই সমীকরণ দিয়ে কোনো এক প্রজাতির জনসংখ্যা নির্ধারণ করা যেতে পারে। xi হলো বর্তমান জনসংখ্যা, G জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, xi+1ভবিষ্যতের জনসংখ্যা। বর্তমান জনসংখ্যা xi এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (G) হলো এই সমীকরণের ইনিশিয়াল কন্ডিশন (initial condition)। যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সমান থাকে তাহলে, জনসংখ্যার বিবর্তন ইনিশিয়াল কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করবে। কিন্তু যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সামান্য পরিবর্তন করা হয়, এই সমীকরণ ক্রমশ জটিল থেকে কেওটিক হয়ে যাবে। ঠিক কি ভাবে এই দুই ইনিশিয়াল কন্ডিশন পরিবর্তন করে সমীকরণের সমাধান পরিবর্তন করা যায় সেটা হাতে কলমে কষে দেখা যাবে, এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং বর্তমান জনসংখ্যা নিজের ইচ্ছে মতো দিলে সমাধানের গ্রাফ এঁকে দেবে কম্পিউটার। G এর ম্যান ২.৯ থেকে ৩.০ তে পরিবর্তন করলে সমাধানের প্রকৃতি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যাবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সমীকরণের প্রাথমিক অবস্থা বা ইনিশিয়াল কন্ডিশনের জন্য সমাধান সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে। আবহাওয়ার ভবিষ্যৎ বাণী করার জন্য যে সমস্ত সমীকরণ গুলো সমাধান করতে হয় সেগুলো আরো জটিল এবং সেই সমস্ত সমীকরণ সমাধান করার জন্য একাধিক ইনিশিয়াল কন্ডিশন জানার দরকার হয়। এই সমীকরণ গুলোর মধ্যে প্রথম সমীকরণকে বলে মাস কনসারভেশন ইকুয়েশন (Mass conservation)। অর্থাৎ একটা সিস্টেমের মধ্যে ভরের পরিবর্তন হয় না। প্রাকৃতিক ভাবে ভাবতে গেলে বায়ুমণ্ডলের ভর ধ্রুবক। দ্বিতীয় সমীকরণ মোমেন্টাম কনসারভেশন (Momentum conservation), অর্থাৎ সিস্টেমের ভরবেগ ধ্রুবক। এই সমীকরণ পদার্থ বিজ্ঞানের জগতে "Navier-Stokes equation" নাম পরিচিত। তৃতীয় সমীকরণ এনার্জি কনসারভেশন (Energy conservation)। এই সমস্ত ইকুয়েশনের গাণিতিক রূপ দিয়ে জটিলতা তৈরী করলাম না। প্রত্যেকটিই নন-লিনিয়ার পার্শিয়াল ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন (non-linear partial differential equation), যা কখনোই হাতে কলমে সমাধান যোগ্য নয়। বিভিন্ন গাণিতিক পদ্ধতি ধরে (যেমন, finite difference, finite volume, finite element ইত্যাদি) এই সমস্ত সমীকরণ সমাধান করতে হয়। এর জটিলতা এতটাই বেশি যে একটা সাধারণ কম্পিউটার দিয়ে এদের সল্ভ করা যায় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা সুপারকম্পিউটারে (সহজে ভাবা যেতে পারে অনেক গুলো CPU দিয়ে তৈরী একটা মেশিন) এই সমস্ত সমীকরণ সমাধান করে বায়ুমণ্ডলের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী করার চেষ্টা করেন। যেহেতু সবার ইনিশিয়াল কন্ডিশন হুবহু এক নয়,এবং সামান্য কন্ডিশনার পরিবর্তন হলেই সমাধান একে ওপরের থেকে আলাদা হয়ে যায়। ঠিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমীকরণের মতো। এই কারণে এক একটা আবহাওয়ার প্রেডিকশন এক এক রকম হয়। Windy app এ গিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে আমেরিকান মডেল বলছে ১২ তারিখ রেঙ্গুনের কাছে ঘূর্ণি ঝড় আছড়ে পড়বে, আবার ইউরোপিয়ান মডেল বলছে ১৪ তারিখ বাংলাদেশ - মায়ানমারের সীমান্তে ঝড়ের ল্যান্ডফল হবে। এই ফারাকের প্রধান কারণ মডেলের ইনিশিয়াল (এবং বাউন্ডারি) কন্ডিশন আলাদা আলাদা। যত সময় এগোবে, ইনিশিয়াল কন্ডিশনের পার্থক্য কমে আসতে থাকবে। তখন মডেল গুলো প্রায় একই রকম প্রেডিকশন করবে। এই কারণে বহুদিন আগে থেকে আবহাওয়ার ফোরকাস্টিং করা যায় না, কারণ প্রাকৃতিক অবস্থা কয়েক ঘন্টার মধ্যে পরিবর্তিত হয় এবং সেই অনুযায়ী মডেল আপডেট না করলে সঠিক সমাধান করা সম্ভব নয়।
0 Comments
Leave a Reply. |
Archives
January 2024
Categories
All
|