পৃথিবীতে সাধারণত ৩ রকমের অগ্নুৎপাত হয়। প্রথম, ডাইভার্জেন্ট প্লেট বাউন্ডারিতে। অর্থাৎ যে সমস্ত জায়গায় দুটো প্লেট একে অন্যের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে, যেমন হয় অতলান্তিক মহাসাগরের মাঝ বরাবর। দ্বিতীয় হয় কনভার্জেন্ট বাউন্ডারিতে, অর্থাৎ দুটো প্লেট একে অন্যের সাথে ধাক্কা দিলে, যেমন হয় প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল বরাবর। তৃতীয় প্রকারের আগ্নেয়গিরি হয় প্লেটের মাঝখানে, যেমন হাওয়াই দ্বীপের আগ্নেয়গিরি। এদের সবারই আরো অনেক ভাগ আছে, তবে মোটামুটি দেখলে এই তিন রকমের আগ্নেয়গিরিই পৃথিবীতে পাওয়া যায়। ম্যাপে আইসল্যান্ডের অবস্থান দেখলে বোঝা যাবে আইসল্যান্ড ঠিক অতলান্তিক মহাসাগরে মাঝে ডাইভার্জেন্ট প্লেট বাউন্ডারির ওপর অবস্থিত। সমস্ত ডাইভার্জেন্ট বাউন্ডারিতে যে অগ্নুৎপাত হয়, তাদের ম্যাগমা তৈরী হয় ৫-১০ কিলোমিটারের মধ্যে। আইসল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান বলছে এখানেও সেই রকমই ম্যাগমা তৈরী হবার কথা। হিলিয়ামএই তত্ত্বের বাধ সাধলো হিলিয়াম। হিলিয়ামের দুটি আইসোটোপ আছে, 3He, 4He। এর মধ্যে 4He তেজস্ক্রিয় ক্ষয় (Radioactive decay) থেকে তৈরী হয়। উরেনিয়াম, থোরিয়াম ইত্যাদি তেজস্ক্রিয় পদার্থ যখন ক্ষয়িত হয়, 4He তৈরী হয় বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে। খুব স্বল্প গভীরতায় এই সমস্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রাচুর্য অনেক বেশি, তাই ভুপৃষ্টের কাছে 4He অনেক বেশি তৈরী হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত গভীরে যাওয়া হবে, তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে তৈরী 4He এর পরিমান কমে যাবে এবং 3He আপেক্ষিক ভাবে বৃদ্ধি পাবে। 3He কে বলে প্রাইমর্ডিয়াল হিলিয়াম। অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন মৌলের আইসোটোপ রেসিও (Isotope ratio) পরিমাপ করা যায়। 3He/4He পরিমাপ করলে দেখা যায় ভূপৃষ্ঠের কাছে তৈরী ম্যাগমা এর মধ্যে 3He/4He অনেক কম। যদি ম্যাগমা পৃথিবীর অনেক গভীর থেকে উঠে আসে তাহলে 3He/4He বেশ কিছুটা বেশি হয়। আইসল্যান্ডের ব্যাসল্টের মধ্যে 3He/4He অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে, যার থেকে বোঝা যায় এই ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের কাছে তৈরী হয় নি। প্লেটের মধ্যবর্তী অঞ্চলের (বাউন্ডারি থেকে দূরে, যেমন হাওয়াই ) আগ্নেয়গিরি থেকে সংগৃহিত নমুনা থেকে 3He/4He এর মান অপেক্ষাকৃত বেশি পাওয়া যায়। অনুমান করা যায় এই সব অঞ্চলের ম্যাগমা পৃথিবীর অনেক গভীরতায় তৈরী হয়েছে। কোর-ম্যান্টল সীমানার কাছে, প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার গভীরতায় তৈরী হয় কিছু তাপ-রাসায়নিক অস্থিরতা (Thermo-chemical Instability)। গভীর পৃথিবীর ম্যাগমা এই অস্থির অঞ্চল থেকেই তৈরী হয় বলে ধারণা করা হয়। হিলিয়াম আইসোটোপের পরিমাপ থেকে বোঝা যায় যে আইসল্যান্ডের অগ্নুৎপাতের জন্য যে ম্যাগমা দরকার হয় তা সম্ভবত উঠে আসে প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার গভীরতা থেকে। পৃথিবীর গভীরে তাপ-রাসায়নিক অস্থির অঞ্চল থেকে যে উদ্গিরণ হয় তাদের বলে ম্যান্টল প্লিউম (Mantle Plume) । ভূপৃষ্ঠের যেস্থানে ম্যান্টল প্লিউম অগ্নুৎপাত ঘটায় তাদের বলে হটস্পট (Hotspot)! আইসল্যান্ড পৃথিবীর সম্ভবত একমাত্র হটস্পট যেটা ঠিক একটা ডাইভার্জেন্ট বাউন্ডারি এর ওপর অবস্থিত। References: Steinberger, B., Bredow, E., Lebedev, S., Schaeffer, A. and Torsvik, T.H., 2019. Widespread volcanism in the Greenland–North Atlantic region explained by the Iceland plume. Nature Geoscience, 12(1), pp.61-68. Garnero, E.J. and McNamara, A.K., 2008. Structure and dynamics of Earth's lower mantle. science, 320(5876), pp.626-628. Marty, B., Upton, B.G. and Ellam, R.M., 1998. Helium isotopes in early Tertiary basalts, northeast Greenland: evidence for 58 Ma plume activity in the North Atlantic–Iceland volcanic province. Geology, 26(5), pp.407-410. Stuart, F.M., Lass-Evans, S., Godfrey Fitton, J. and Ellam, R.M., 2003. High 3He/4He ratios in picritic basalts from Baffin Island and the role of a mixed reservoir in mantle plumes. Nature, 424(6944), pp.57-59.
0 Comments
Leave a Reply. |
Archives
January 2024
Categories
All
|