পড়ুন: ভারত মহাসাগরের গর্ত পর্ব ১ Geoid এবং reference ellipsoid এর মধ্যে উচ্চতার পার্থক্যকে বলে geoid anomaly। যদি geoid এর উচ্চতা ellipsoid এর থেকে বেশি হয়, তাহলে তাকে বলে positive geoid anomaly এবং এর উল্টোটা হলে, অর্থাৎ geoid উচ্চতা reference ellipsoid এর থেকে কম হলে, তাকে বলে negative geoid anomaly। স্যাটেলাইট এর ডাটা থেকে প্রাপ্ত geoid anomaly এর ম্যাপ থেকে দেখা যাচ্ছে ভারত মহাসাগরের নিচে geoid anomaly সর্বনিম্ন। এইখানেই সমুদ্রতল প্রায় ১০৬ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। Geoid এর কিছু গাণিতিক রূপ আছে, সে বিষয়ে খুব অল্প কথা বলে রাখছি। নিউটনের সূত্র অনুযায়ী, কোনো m ভরের বস্তুর ওপর মাধ্যাকর্ষণ বল (F) হবে, F = GMm/r^2 যা বস্তুর নিজের ওজনের (mg) সমতুল্য। যেখানে G মহাকর্ষজ ধ্রুবক, g অভিকর্ষজ ত্বরণ, M পৃথিবীর ভর, r পৃথিবীর ব্যাসার্ধ। এই সমীকরণ গুলো নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলে অভিকর্ষজ ত্বরণের একটা নতুন সমীকরণ পাওয়া যাবে। অর্থাৎ mg = GMm/r^2 g=GM/r^2 g= -d/dr (GM/r) g= -dU/dr U=GM/r U কে বলা হয় গ্রাভিটেশনাল পোটেনশিয়াল (Gravitational Potential) বা geoid। আগের পর্বে বলেছিলাম geoid একটি equipotential surface। এই সমীকরণ থেকে ধারণা করা যেতে পারে, geoid এমন একটা surface যেখানে U (gravitational potential) এর মান সর্বদা সমান থাকে এবং এই মান সমুদ্রতলের potential এর সাথে সমান। সমীকরণ থেকে আরো একটা বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে যে, gravitational potential ভর এবং দূরত্বের (ব্যাসার্ধ) ওপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর অভ্যন্তরে যদি বেশি ঘনত্বের পদার্থ থাকে, তাহলে সেই সব অঞ্চলের ভর বৃদ্ধি পায় (mass /density anomaly)। অতিরিক্ত ভরের বস্তু potential surface কে এমন ভাবে বাঁকিয়ে দিতে পারে যাতে geoid anomaly তৈরী হয়। ঠিক কি ভাবে হয়, একটা ছবির মাধ্যমে বোঝা যাক। পৃথিবীর অভ্যন্তরকে অনেকগুলি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যে স্থিতিস্থাপক স্তর আছে, তাকে বলে lithosphere। ১০০ থেকে ৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত স্তরকে বলে ম্যান্টল। এই দুটো স্তরই কঠিন। ৩০০০ কিলোমিটারের নিচে আছে তরল outer core (বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল) এবং ৫১৫০ কিলোমিটার থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত রয়েছে শক্ত লোহার গোলক বা inner core (অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল)। সমুদ্রতলের ওঠানামা বা geoid anomaly হয় প্ৰথম ৩০০০ কিলোমিটারের (surface - core mantle boundary) মধ্যে থাকা mass/density anomaly এর কারণে। ছবিতে এই ৩০০০ কিলোমিটারের একটা কল্পচিত্র দেখানো হয়েছে। ধরা যাক একটা বেশি ঘনত্বের বস্তু (নীল রঙের) পৃথিবীর মধ্যে রয়েছে। এর কারণে অতিরিক্ত ভর তৈরী হয়েছে, এবং এই অঞ্চলের gravitational potential বৃদ্ধি পেয়েছে (U=GM/r, M বাড়লে U বাড়বে)। potential বেড়ে গেলে, geoid surface এর উচ্চতা বেড়ে যাবে এবং positive geoid anomaly তৈরী হবে (a)। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা এতো সরল নয়। ধরা যাক, একটা পাতলা কাঠের বেঞ্চে বেশ ভারী ওজনের কিছু বই রাখা হলো। প্রথমে বিশেষ কিছু চোখে পড়বে না, কিন্তু দীর্ঘদিন বইয়ের ওজনের জন্য কাঠের বেঞ্চটা আসতে আসতে বেঁকে যেতে থাকবে। একই ভাবে, পৃথিবীর মধ্যে কোনো একটা অতিরিক্ত ভারী বস্তু অনেকদিন (কোটি কোটি বছর) ধরে থাকলে, সমুদ্রতল (Sea level) এবং core mantle boundary তে টান পড়বে। এই টান নির্ভর করে পৃথিবীর অভ্যন্তরের সান্ধ্রতার (viscosity) ওপর। যদি ধরা হয় পৃথিবীর সান্ধ্রতা সর্বত্র একই (uniform viscosity), তাহলে সমুদ্রতল এবং core mantle boundary উভয়ই একই মাত্রায় টান পড়বে, এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা কিছুটা নেমে আসে (b)। এক্ষেত্রে, অতিরিক্ত ভর থাকা সত্ত্বেও যেহেতু সমুদ্রতলের উচ্চতা নেমে আসে, তাই net geoid anomaly নেগেটিভ হয়। পরিস্থিতি আরো জটিল হয় যদি পৃথিবীর সান্ধ্রতা uniform না হয়। ধরা যাক, প্রথম ৬০০ কিলোমিটারের সান্ধ্রতা e, এবং ৬০০-৩০০০ কিলোমিটারের সান্ধ্রতা 30e, অর্থাৎ, ওপরের স্তর অপেক্ষা নিচের স্তর ৩০ গুন্ বেশি সান্ধ্র। এই রকম অবস্থায় সমুদ্রতল যতটা নিচে নামবে, core mantle boundary তার থেকে অনেকটা বেশি নিচে নেমে যাবে (c)। Net geoid anomaly এখানে নেগেটিভ হলেও তার মান (b) এর থেকে কম হবে। পৃথিবীর কোন গভীরতায় কতটা অতিরিক্ত ভরের বস্তু থাকলে geoid anomaly কেমন হবে, তার কিছু হিসাব আছে। ভূপদার্থবিদরা গাণিতিক মডেলের সাহায্যে geoid anomaly এবং density anomaly এর মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করে। এই পারস্পরিক সম্পর্ককে বলে geoid kernel। বিভিন্ন গবেষণা পত্রে এক এক রকমের kernel পাওয়া যাবে, কিন্তু বোঝার সুবিধার জন্য, Hager and Richards [1989] এর প্রকাশিত classical geoid kernel এর একটি ছবি নিয়েই আলোচনা করবো। এই ছবিতে ২টি কার্ভাড লাইন আছে। একটি কার্ভ রয়েছে positive density anomaly এর জন্য (solid line) এবং আর একটি রয়েছে negative density anomaly (dashed line) এর জন্য। positive density anomaly বা ভারী পদার্থ থাকলে সেই স্থানে তৈরী হয় অতিরিক্ত ভর, আর negative density anomaly বা হালকা পদার্থ থাকলে তৈরি হয় ভরের ঘাটতি। এখন দেখা যাক, ঠিক কি বোঝা যায় এই কার্ভ গুলো থেকে? যদি একটি unit positive density anomaly পৃথিবীর ভিতরে যেকোনো গভীরতায় রাখা হয়, তার জন্য ভূপৃষ্ঠে কতটা geoid anomaly পাওয়া যাবে, সেটার পরিমাপ করা হয় এই kernel থেকে। ধরা যাক একটি unit positive density anomaly ২৫০০ কিলোমিটার গভীরতায় রয়েছে। এর জন্য ভুপৃষ্টে -০.১৬ geoid anomaly তৈরী হবে। অর্থাৎ এই density anomaly এর ওপর যদি সমুদ্র থাকে, তার জলতল কিছুটা নেমে আসবে। এই kernel থেকে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে। যদি positive density anomaly ৬৬০ কিলোমিটারের ওপরে থাকে, তাহলে ভূপৃষ্ঠে positive geoid anomaly পাওয়া যাবে। কিন্তু, positive density anomaly ৬৬০ কিলোমিটারের নিচে গেলে geoid anomaly নেগেটিভ হয়ে যাবে। অর্থাৎ সমুদ্রের জলতল পারিপার্শ্বিক জলতলের থেকে নিচে নেমে যেতে পারে। যদি negative density anomaly থাকে, তাহলে kernel টি একদম উল্টে যায়। সেক্ষত্রে negative density anomaly ৬৬০ কিলোমিটারের ওপরে থাকলে ভূপৃষ্ঠের geoid anomaly হবে নেগেটিভ, অর্থাৎ সমুদ্রতল নিচে নেমে যেতে পারে। ওপরের আলোচনার সারসংক্ষেপ করলে দাঁড়ায়, negative geoid anomaly পেতে গেলে বা সমুদ্রতলকে নিচে নামতে হলে দুটো উপায় আছে। হয় ৬৬০ কিলোমিটারের উপরে negative density anomaly বা হালকা ঘনত্বের পদার্থ থাকতে হবে। অথবা, বেশি ঘনত্বের পদার্থকে (positive density anomaly) ৬৬০ থেকে ৩০০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে হবে। ভারত মহাসাগরের নিচে ঠিক হচ্ছে, সেই নিয়ে পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো। Reference:
Hager, B.H. and Richards, M.A., 1989. Long-wavelength variations in Earth’s geoid: physical models and dynamical implications. Philosophical Transactions of the Royal Society of London. Series A, Mathematical and Physical Sciences, 328(1599), pp.309-327. [pdf]
0 Comments
Leave a Reply. |
Archives
January 2024
Categories
All
|