বাংলা মাধ্যম, ইংরিজি মাধ্যম, এবং স্বইচ্ছায় নেট মাধ্যমে লেখা বিভিন্ন ভূগোল শিক্ষকদের স্বাধীন লেখা - সমস্ত পরিসরেই রয়েছে এক বিরাট ধোঁয়াশা। কখনো ভূত্বক হয়ে যাচ্ছে প্লেট, লিথোস্ফিয়ার আর ভূত্বক মিলে মিশে এক হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে একটু পরিষ্কার ধারণা দেবার জন্য আবার লেখা লেখি। দেখা যাক, পরিষ্কার হয় কিনা। পৃথিবীর রাসায়নিক (Chemical) এবং যান্ত্রিক (Mechanical) বিভাজন পৃথিবীর স্তরগুলোকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে একটি হলো রাসায়নিক ভাবে, আরেকটি মেকানিকাল (যান্ত্রিক) শক্তি অনুসারে। রসায়ন গত দিক থেকে ভাগ করলে হয় crust (ভূত্বক), mantle (গুরুমন্ডল), core (কেন্দ্রমণ্ডল)। ক্রাস্ট বা ভূত্বক পৃথিবীর সব থেকে পাতলা স্তর। সমুদের নিচে এর গড় গভীরতা ~৫-১০ কিলোমিটার, মহাদেশের নিচে গড় প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার। ছবিতে সবুজ রঙের অংশগুলো। মহাসাগরের ক্রাস্ট ব্যাসল্ট জাতীয় পাথর দিয়ে তৈরী হয়, মহাদেশীয় ক্রাস্ট গ্রানাইট-আন্ডেসাইট জাতীয় পাথরে তৈরী হয়। ব্যাসল্ট - গ্রানাইট- আন্ডেসাইট এই জাতীয় পাথরে সিলিকা ৪৫% এর বেশি থাকে। ক্রাস্ট এর পর থেকে শুরু হয় ম্যান্টল যেখানে সিলিকা পরিমান কম। ম্যান্টলের পাথরকে বলা হয় পেরিডটাইট (periodtite) এবং এই পাথরের সিলিকা পরিমান ৪৫% এর থেকে কম। সিলিকা তারতম্যের অনুসারে ক্রাস্ট - ম্যান্টল বিভাজন হয়। ক্রাস্ট আর ম্যান্টলের মধ্যে থাকে মোহো বিযুক্তি রেখা (ছবিতে সবুজ এবং কমলা রঙের সংযোগ স্থল)। রাসায়নিক ভাবে এই ভূত্বকের নিচ থেকে শুরু করে ২৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পুরোটাই রাসায়নিক ম্যান্টল (ছবিতে কমলা, হলুদ এবং নীল সমস্ত অংশই রাসায়নিক ম্যান্টলের মধ্যে পরে)। অন্যদিকে যান্ত্রিক শক্তির হিসাবে এই বিভাজনটা একটু আলাদা। যান্ত্রিক ভাবে পৃথিবীর প্রধান তিনটে স্তরকে বলতে গেলে : lithosphere (শিলামন্ডল), mantle (গুরুমণ্ডল), এবং core (কেন্দ্রমণ্ডল) । পৃথিবীর সব থেকে ওপরে অবস্থিত শক্ত এবং স্থিতিস্থাপক (rigid and elastic) স্তর হলো লিথোস্ফিয়ার বা শিলামন্ডল। লিথোস্ফিয়ার মোটামুটিভাবে গড়ে ১০০ কিলোমিটার পুরু। কিছু প্রাচীন লিথোস্ফিয়ার কখনো প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পুরু হয়, তবে তাদের অবস্থান মাত্র ৫% জায়গায়। লিথোস্ফিয়ার সব থেকে শক্ত এবং সান্দ্র স্তর (strong and viscous)। গভীরতা মেপে দেখলে, লিথোস্ফিয়ার ক্রাস্ট এবং ম্যান্টলের উপরিভাগের কিছুটা নিয়ে তৈরী। ক্রাস্টের গভীরতা গড়ে ৩০-৩৫ কিলোমিটার (মহাদেশের নিচে), এবং বাকি ৭০-৬৫ কিলোমিটার ম্যান্টল মাইল মিলে তৈরী হয় লিথোস্ফিয়ার (ছবিতে সবুজ এবং কমলা রঙের অংশ মিলে পুরোটা লিথোস্ফিয়ার)।
লিথোস্ফিয়ারের পরে পৃথিবীর মেকানিক্যাল (যান্ত্রিক) শক্তি কিছুটা কমে যায়। এই খান থেকে শুরু হয় ম্যান্টল। ম্যান্টল যান্ত্রিক ভাবে অনেক স্তরে বিভক্ত। ঠিক লিথোস্ফিয়ারের নিচেই থাকে আস্থেনোস্ফিয়ার বা নমনীয় মন্ডল (১০০-৩০০ কিলোমিটার, ছবিতে হলুদ), তারপর শুরু হয় ম্যান্টলের ট্রানসিশন জোন (৩০০-৬৬০ কিলোমিটার), এবং শেষে লোয়ার ম্যান্টল (৬৬০-২৯০০ কিলোমিটার, ছবিতে নীল অংশ)। এসবের মধ্যেও অনেক সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম স্তর রয়েছে। সে সবের বিস্তারিত বিবরণে যাচ্ছি না। লিথোস্ফিয়ারের নিচ থেকে ২৯০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরতা পর্যন্ত এই অংশ যান্ত্রিক ম্যান্টলের অংশ (ছবিতে হলুদ এবং নীল)। তাহলে প্লেট কোনটা? এর উত্তর সহজ। লিথোস্ফিয়ারই হলো প্লেট। ভূত্বক বা ক্রাস্ট প্লেট নয়। এ জন্য অনেক সময় লিথোস্ফিয়ারিক প্লেট বলা হয় (ছবিতে সবুজ এবং কমলা রঙের অংশ)। রাসায়নিক দিক থেকে বা যান্ত্রিক শক্তির দিক থেকে ম্যান্টল আর কোর একই গভীরতায় বিভাজিত। ২৯০০ কিলোমিটার গভীরতা পর্যন্ত ম্যান্টলের বিস্তৃতি, যা রাসায়নিক ভাবে সিলিকা যৌগ দিয়ে তৈরী। ২৯০০ কিলোমিটারের নিচে সিলিকা আর থাকে না, লোহা নিকেলের মতো ভারী রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরী হয় কোর । ২৯০০ - ৫১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরতায় ভীষণ উত্তাপের কারণে লোহা নিকেল একদম জলবৎ তরল অবস্থায় থাকে। এটাই পৃথিবীর একমাত্র তরল স্তর। ৫১৫০- ৬৩৭০ কিলোমিটার গভীরতার মধ্যে চাপ প্রচন্ড বেড়ে যাবার কারণে লোহা আবার কঠিন অবস্থায় পৌঁছায়। ২৯০০ কিলোমিটারের গভীরতায় তাই রাসায়ানিক এবং যান্ত্রিক দুই রকম ধর্মই পরিবর্তিত হয়।
0 Comments
Leave a Reply. |
Archives
January 2024
Categories
All
|